প্রাইভেট টেলিকম কোম্পানিগুলির রিচার্জ প্ল্যানের দামের চাপে পড়ে সাধারণ মানুষদের প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। Jio, Airtel এবং Vi কোম্পানির প্ল্যানের তুলনায় দেশের সরকারি টেলিকম কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড অর্থাৎ BSNL এর প্ল্যানগুলি যথেষ্ট সস্তা। এদিকে মোবাইল ইউজারদের প্রায়ই BSNL নেটওয়ার্কের সমস্যার কথা বলতে শোনা যায়। এই খারাপ নেটওয়ার্কের সমস্যার এবার সমাধান হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে BSNL 4G সার্ভিস লঞ্চ করে দিয়েছেন।
ভারতের বাজারে BSNL এর 25 বছর সম্পূর্ণ হয়েছে এবং এই উপলক্ষে 4G সার্ভিস রোলআউট করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এটিকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথে একটি বড় পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন। এই সার্ভিস লঞ্চের মধ্য দিয়ে কোম্পানি এখন প্রাইভেট কোম্পানিগুলির মতোই 4G নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার কোম্পানিগুলির লিস্টে স্থান করে নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই পদক্ষেপের দৌলতে প্রায় 20 লক্ষ নতুন সাবস্ক্রাইবার এই কোম্পানিতে শিফ্ট করবেন এবং এর ফলে BSNL 5G আপগ্রেড আরও সহজ হয়ে উঠবে।
সবচেয়ে বড় কথা BSNL এক সঙ্গে 98 হাজার সাইটে 4G Network রোলআউট করেছে এবং একই সঙ্গে 97,500টি নতুন মোবাইল টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে আপাতত 92,600টি টাওয়ার 4G নেটওয়ার্কে কাজ করবে। আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী BSNL সম্পূর্ণ ভারতীয় টেকনোলজি ব্যাবহার করে এই কাজটি সম্পন্ন করেছে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ স্বদেশী 4G টেকনোলজি এবং এটির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার উভয় ভারতে ডেভেলপ করা হয়েছে।
জানিয়ে রাখি BSNL এর এই স্বদেশী 4G নেটওয়ার্ক ডিপ্লয় করার পর ভারত বিশ্বের মাত্র পাঁচটি এমন দেশের তালিকায় নিজেদের স্থান করে নিয়েছে যাদের কাছে নিজেদের ডেভেলপ করা 4G নেটওয়ার্ক রয়েছে। টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস অর্থাৎ TCS এবং Tejas Networks এই প্রজেক্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
BSNL এর এই নতুন 4G সার্ভিসের ফলে প্রায় 9 কোটি মানুষ লাভবান হবেন। আগেই বলা হয়েছে কোম্পানির রিচার্জ প্ল্যানগুলির দাম জিও ও এয়ারটেলের মতো প্রাইভেট কোম্পানিগুলির চেয়ে অনেকটাই সস্তা। তবে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে যেসব ইউজাররা প্রাইভেট কোম্পানিগুলির দিকে অগ্ৰসর হতেন, এখন তাদের কাছে সস্তা BSNL এ ফিরে আসার অপশন থাকবে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে BSNL 4G নেটওয়ার্কের দৌলতে 26,700টির চেয়েও বেশি গ্ৰামে ভালো মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া যাবে।
এবার অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে পারে, চারদিকে 5G নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও BSNL 4G নিয়ে এত মাতামাতির কারণ কি? জানিয়ে রাখি প্রাইভেট কোম্পানিগুলি তাদের 5G নেটওয়ার্কের জন্য Ericsson, Nokia এবং Samsung এর মতো কোম্পানিগুলির সঙ্গে পার্টনারশিপ করেছিল। ফলে এইসব কোম্পানির টেকনোলজি, কন্ট্রোল, সিকিউরিটি এবং সফটওয়্যার আপডেট বিদেশ থেকেই আসে।
অপরদিকে BSNL সম্পূর্ণ ইন্ডিজিনিয়াস 4G নেটওয়ার্ক লঞ্চ করেছে। এতে সি-ডট (Centre for Development of Telematics) 4G সার্ভিসের কোর নেটওয়ার্ক সলিউশন ডেভেলপ করেছে এবং ITI ও TCL এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি হার্ডওয়্যার ইন্টিগ্রেশন করেছে। অর্থাৎ কোম্পানির কোর নেটওয়ার্ক, রেডিও ইউনিট এবং বেস স্টেশন সবকিছুই সম্পূর্ণ ভারতীয়। এর ফলে গোটা দেশে স্বদেশী 4G নেটওয়ার্ক পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে সহজেই 5G নেটওয়ার্ক রোলআউট করা যাবে।
BSNL 4G লঞ্চ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 6G নেটওয়ার্কের প্রস্ততি সম্পর্কেও কথা বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ভারতের 6G রোডম্যাপ তৈরি হয়ে গেছে এবং 2030 সালের মধ্যে এটি পেশ করা হতে পারে। 5G সার্ভিসের ক্ষেত্রে ভারত গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত 5G নেটওয়ার্ক রোলআউট করে রেকর্ড গড়েছিল। এবার 6G এর ক্ষেত্রেও এই একই লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) জানিয়েছে ভবিষ্যতে সহজেই তাদের ক্লাউড বেসড নেটওয়ার্ক আপগ্রেড হয়ে যাবে এবং ডিজিটাল অ্যাক্সেস ও কানেক্টিভিটি আরও উন্নত এবং স্ট্রং হয়ে উঠবে।











