1G, 2G থেকে শুরু করে বর্তমানে 5G, দেখে নিন কিভাবে বদলেছে এই অ্যাডভান্স টেকনোলজি

বর্তমানে ভারতীয় স্মার্টফোন ইউজাররা অধীর আগ্রহে 5G এর জন্য অপেক্ষা করছে। দেশে 5জি ট্রায়াল অনুমোদন পেয়েছে এবং টেলিকম কোম্পানিগুলিও স্পেকট্রাম বাছাই করে নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে 2021 এর শেষের দিকে অথবা 2022 এর শুরুতেই ভারতে সক্রিয়ভাবে 5G টেকনোলজির ব‍্যবহার শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি কি 5G আসার আগের নেটওয়ার্ক ও মোবাইল টেকনোলজি সম্পর্কে জানেন? G মানে Generation আমরা সবাই জানি, কিন্তু কখনও অতীতের দিকে ফিরে জানার চেষ্টা করেছেন 5G ও 4G এর আগে 3G, 2G এবং 1G এর যাত্রা কেমন ছিল? আজ আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে খুব সহজ ভাষায় আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করব প্রত‍্যেক জেনারেশনের সঙ্গে মোবাইল টেকনোলজির ক্ষেত্রে কি কি পরিবর্তন হয়েছে। বেশি টেকনিক্যাল কথা না বলে এবং বড় বড় শব্দ ব‍্যবহার না করে আমরা আপনাদের 1G থেকে 5G পর্যন্ত যাত্রা জানাতে চলেছি।

1G

মোবাইল ফোনের প্রথম যাত্রা শুরু হয় 1G হিসেবে 1980 সাল নাগাদ। তখন যে টেকনোলজি হাতে পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ আগ্রহী হয়ে উঠেছিল তারা তখন জানত পর্যন্ত না যে ভবিষ্যতে একেই 1G নামে ডাকা হবে। আপনারা হয়ত অনেকেই সিনেমা বা অন্য কোথাও দেখেছেন আগেকার দিনে লম্বা অ্যান্টেনাওয়ালা মোবাইল ফোন পাওয়া যেত। সেইসব ফোনকেই ফার্স্ট জেনারেশন মোবাইল ফোন বলা হয়। 1G মোবাইল ফোনের টেলিকমিউনিকেশন স্পীড ছিল 24kb/s অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে 24 কিলোবাইট।

তখনই অবশ‍্য বেশি স্পীড প্রয়োজন পড়ত না, কারণ মানুষের ডেটা কোনো কাজের ছিল না। স্পীড ছাড়াও এই জেনারেশনের আরেকটি বড় খামতি ছিল ম‍্যাসেজ। এইসব ফোন থেকে কোনো ম‍্যাসেজ পাঠানো যেত না। এই টেকনোলজির সাহায্যে ডিজিটাল নয় বরং শুধুমাত্র অ্যানালগ পদ্ধতিতে ফোন ব‍্যবহার করা যেত। তখন ফোনে শুধু অ্যানালগ সিগন্যাল আদান প্রদান হত এবং এর মাধ্যমেই ভয়েস কল করা হত। তবে এর সাহায্যে এস‌এম‌এস সম্ভব ছিল না।

2G

ফার্স্ট জেনারেশন ফোনের ঘাটে মেটানোর জন্য এরপর 90 এর দশকে মার্কেটে আসে 2G। এই টেকনোলজির সাহায্যে ডেটা স্পীড বেড়ে 64kb/s অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে 64 কিলোবাইটে পৌঁছে যায়। এই স্পীড খুব বেশি না হলেও আগের জেনারেশনের এস‌এম‌এসের অভাব এই টেকনোলজি দূর করে। 2G টেকনোলজি ব‍্যবহার করে মোবাইল ফোন ইউজাররা ভয়েস কলের পাশাপাশি এস‌এম‌এস ফিচার উপভোগ করতে পারে।

2G প্রজম্মের হাত ধরেই এস‌এম‌এসের চলন শুরু হয়। তখন এমন একটি সময় দেখা গেছে যে একটি এস‌এম‌এসের জন্য 3 টাকা পর্যন্ত দাম দিতে হত তাও আবার টেক্সট লিমিট অর্থাৎ সীমিত অক্ষর সংখ্যার সঙ্গে। এছাড়া এই টেকনোলজি মোবাইল ফোনকে যথেষ্ট কম্প‍্যাক্ট করতে সক্ষম হয় এবং ফোন ইউজাররা পকেটে এই ফোন রাখতে পারত। এই সময়‌ই প্রথম ছবির আদান প্রদান হতে দেখা যায়, তবে তখন মিডিয়া কোয়ালিটি ও ট্রান্সফার স্পীড উভয়ই ছিল খুব কম।

3G

মোবাইল ফোনের তৃতীয় প্রজম্মে নেটওয়ার্ক স্পীড কিলোবাইট ছাড়িয়ে মেগাবাইটে পৌঁছে যায়। 2003-2004 সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে 3G ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন মোবাইল ফোনে মাল্টিমিডিয়ার ব‍্যবহার শুরু হয়। অর্থাৎ এই জেনারেশন ভয়েস কল ও এস‌এম‌এসের পরিধি আরও বাড়িয়ে দেয়। 3G আসার পর মোবাইল ফোনে 2mb/s অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে 2 এমবি পর্যন্ত স্পীড পাওয়া যেত।

3G টেকনোলজি ব‍্যবহার করে ফোনে ভয়েস কল ও এস‌এম‌এসের পাশাপাশি ইন্টারনেট উপভোগ করা শুরু হয়। এই সময় থেকেই Facebook এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল‍্যাটফর্ম এবং YouTube এর মতো ভিডিও স্ট্রীমিং অ্যাপ মার্কেটে আসতে শুরু করে। কিন্তু স্পীড কম থাকার ফলে ইউটিউব ও এই ধরনের সার্ভিসগুলিকে বাফারিং এর সম্মুখীন হতে হত। এই সমস‍্যার সমাধানের জন্য HHPA+ ও HHSPA Turbo ভার্সন পেশ করা হয় ফলে 42 এমবিপিএস পর্যন্ত স্পীড বেড়ে যায়।

4G

3G টেকনোলজিকে আরও ফাস্ট করে তোলার জন্য 2009 সাল নাগাদ মার্কেটে 4জি আসতে শুরু করে। এতদিনে মোবাইল ফোন কম্পিউটারের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো ক্ষমতাসীন হয়ে উঠেছে এবং এক‌ই সঙ্গে ফোন হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। এই জেনারেশনে আরও এভোলিউশন ঘটিয়ে মার্কেটে আনা হল 4G LTE এবং 4G VoLTE। এই সময় ভয়েস কল, এস‌এম‌এস ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং ছাড়াও ফোনে ভিডিও কল ফিচার চলে আসে।

শুরুতে যেখানে অ্যানালগ সিগন্যাল ব‍্যবহার করে ভয়েস কল করা হত সেখানে এবার ইন্টারনেট ব‍্যান্ডের মাধ্যমে ভয়েস কল করার যুগ চলে এল। 4জি নেট‌ওয়ার্কে ইন্টারনেট স্পীড বেড়ে 100mb/s অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে 100 এমবি ছুঁয়ে ফেলে। 4জি মোবাইল টেকনোলজিকে সবচেয়ে বড় উন্নতি বলা যেতে পারে কারণ এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের বেশ কিছু রাস্তা খুলে যায় এবং আগামী দিনের নতুন আভাস পাওয়া যায়। 4জির যুগে মোবাইল ফোনের মাল্টি ডিভাইস কানেক্টিভিটিসম্ভব হয়ে ওঠে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমি বা আপনি যে স্মার্টফোন ব‍্যবহার করছি সেগুলি সব‌ই 4জি স্মার্টফোন। বর্তমানে 4জি নেট‌ওয়ার্কের সর্বোচ্চ স্পীড 600 এমবিপিএস।

5G

বিশ্বে 5জি সূচনা হয়ে গেছে এবং ভারতেও এর ট্রায়াল নিয়ে কাজ চলছে। দেশে ইতিমধ্যে 5জি ফোনের কেনাকাটা চলছে এবং আগামী বছরের মধ্যে 5জি নেটওয়ার্ক‌ও পাওয়া যাবে। 5জির ক্ষেত্রে ইন্টারনেট স্পীড মেগাবাইট থেকে উঠে গিগাবাইটে পৌঁছে যাবে এবং এতে 1 জিবিপিএস অর্থাৎ 4জির চেয়ে কমপক্ষে 100 গুণ বেশি স্পীড উপভোগ করা যাবে।

5জি টেকনোলজি শুধুমাত্র মোবাইল ফোন পর্যন্ত নয় বরং বাল্ব, পাখা, ফ্রিজ ও গাড়িও 5জির সঙ্গে কানেক্ট করা যাবে। 5জিতে IOT এর যথেষ্ট গুরুত্ব থাকবে এবং এই টেকনোলজির সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে সমস্ত ডিভাইস ও অ্যাপ্লায়েন্স একে অপরের সঙ্গে কানেক্ট হতে পারবে। অনেক দূরে এমনকি শহর বা দেশের বাইরে বসেও নিজের ফোন থেকে কম‍্যান্ড দিয়ে বাড়িতে যে কোনো ডিভাইস কন্ট্রোল করা যাবে। অর্থাৎ কোলকাতায় বসে ফোনের মাধ্যমে ঢাকার বাড়িতে লাইট জ্বালানো বা বন্ধ করা থেকে শুরু করে ফ্রিজ বা এসির তাপমাত্রা কমানো বাড়ানো যাবে।

আমাদের ফেসবুকে ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here