ব্যায়বহুল 5G পরিষেবা চান না ভালো 4G নেটওয়ার্ক! ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি বড় প্রশ্ন

ভারতে 5G পরিষেবা রোল আউটের জন্য তীব্র গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। গত বছর থেকেই এর পরীক্ষা শুরু হলেও নতুন বছরে এর আগমন প্রায় নিশ্চিত। সম্প্রতি, টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ (DOT) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে 2022 সালে ভারতে 5G পরিষেবা শুরু হবে, যার জন্য প্রথমে 13টি শহর চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি ভাল জিনিস যে তারা উন্নত মোবাইল প্রযুক্তির সাথে সুপার ফাস্ট ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হবে। কিন্তু অন্যদিকে, 5G পরিষেবার নামে মোবাইল ডেটা চার্জ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে, পরিষেবাটি ভাল হোক বা না হোক। আমরা দেখেছি যে সম্প্রতি সমস্ত বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের ট্যারিফ প্ল্যান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু এখনও নেটওয়ার্কের অবস্থা ঠিক তেমনই আছে যেমনটা কম দামে ছিল। নামেই 4G পরিষেবা, সেখানে 3G-এর মতো পরিষেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায়, ব্যবহারকারীদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল 5G এখন প্রয়োজনীয় নাকি একই দামে একটি ভাল 4G নেটওয়ার্ক দেওয়া উচিত? আসুন আমরা এই বিষয়টি আরও ভালো ভাবে বুঝে নি, তবে তার জন্য প্রথমে আমাদের ভারতে 5G এবং 4G নেটওয়ার্কগুলির অবস্থা সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন! ইলেকট্রিক গাড়ি কিনলে এই রাজ্যে পাওয়া যাবে 2.5 লক্ষ টাকা ছাড়

2022 সালে চালু হবে 5G পরিষেবা

গত বছরই, ভারতে 5G পরিষেবার ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল MTNL সহ প্রায় সমস্ত ব্যক্তিগত মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীকে, যার মধ্যে আছে Jio, Airtel এবং Vodafone Idea । সেখানে বলা হয়েছিল যে কোম্পানি সমস্ত মেট্রো শহর ছাড়াও, গ্রামীণ ভারতেও 5G ট্রায়াল করা উচিত, যাতে সর্বত্র আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যায়। একই সঙ্গে সম্প্রতি ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন এর তরফে (DOT) নতুন বছরে 5G পরিষেবা আনার ঘোষণা করা হয়েছে । সংস্থার তরফে জারি করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে ভারতে প্রথম 5G পরিষেবা শুরু হবে জামনগর, আহমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, দিল্লি, গান্ধীনগর, গুরুগ্রাম হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, লখনউ, মুম্বাই এবং পুনেতে। এই অবস্থায়, এটা স্পষ্ট যে 2022 সালে আমরা ভারতে 5G পরিষেবা ব্যবহার করতে পারব। তবে সেটা কবে থেকে শুরু হবে এবং বাকি জায়গায় কবে আসবে তা স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি।

5G র স্থিতি কেমন হবে

এটা তো পরিষ্কার যে নতুন বছরে ভারতে 5G পরিষেবা চালু হয়ে যাবে, কিন্তু এখন যেসব জিনিসগুলো সামনে এসেছে তা থেকে এটা স্পষ্ট যে আপনি এই পরিষেবাটি সারা ভারতে একসাথে দেখতে পাবেন না। এটি শুধুমাত্র কয়েকটি নির্বাচিত জায়গায় থাকবে এবং সেখানেও নেটওয়ার্ক এরিয়া খুব সীমিত হবে। অর্থাৎ, পুরো শহরেও পাওয়া যাবে এমনটা নয়। কারণ এই ধরনের পরিস্থিতি আমরা আগেও দেখেছি। যখন এয়ারটেল এবং VOdafone তাদের 4G পরিষেবা শুরু করেছিল, সেই সময়ে এটি খুব ছোট পরিসরে চালু হয়েছিল। এটি বড় শহর থেকে শুরু হয়েছিল কিন্তু সেখানেও পুরো এলাকায় 4G নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়নি। এই কারণেই Jio তার পরিষেবা চালু করেছিল এবং কোম্পানি গোটা ভারতে 4G পরিষেবা শুরু করেছিল এবং চাপের মধ্যে পরায় অন্যান্য মোবাইল নির্মাতাদেরও একই কাজ করতে হয়েছিল। Jio-এর কারণেই ব্যবহারকারীদের 4G পরিষেবার খরচও কমেছে। অন্যথায় 4G এর নামে মোটা চার্জ নেওয়া হচ্ছিল এবং 2013-14 সালে 4G নেটওয়ার্ক চালু হওয়া সত্ত্বেও 2016 সাল পর্যন্ত এই সংস্থাগুলির 4G পরিষেবা সারা দেশে উপলব্ধ ছিল না। শুরুতে 5G এর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হতে চলেছে।

আরও পড়ুন: 50MP ট্রিপল রেয়ার ক‍্যামেরা ও Snapdragon 680 চিপসেটসহ ভারতে লঞ্চ হতে চলেছে Vivo Y21T

ছোট শহর এবং গ্রামে কেমন হবে 5G নেটওয়ার্ক

যখন বড় মঞ্চে কথা ওঠে, তখন ভারতে গ্রামগুলিকে স্বর্গ বানানোর স্বপ্ন দেখানো হয়, এবং 5G পরিষেবার ক্ষেত্রেও এই একই জিনিস ঘটছে। বলা হচ্ছে সারা ভারতে 5G পরিষেবা থাকবে। কিন্তু কেমন অবস্থা হবে সেটা তো আপনারাও জানেন । জিও হোক বা এয়ারটেল বা ভোডাফোন, যাই হোক না কেন, আজও গ্রামে এবং ছোট শহরে তাদের নেটওয়ার্কের অবস্থা খারাপ। 4G কথা বলা হলেও সেখানে 2G এবং 3G স্পিডের পরিষেবা থাকে। আমাদের অনেক ব্যবহারকারী ফেসবুক এবং ওয়েবসাইটে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই জায়গাগুলোতে 5G নিয়ে কথা বলা আপাতত অপ্রাসঙ্গিক হবে।

গ্রামকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয় না?

ভারত আসলে গ্রামের দেশ এবং এর জনসংখ্যার 70 শতাংশ গ্রামে বাস করে, তাই ভারতের উন্নয়নের জন্য, আমাদের প্রথমে গ্রামীণ ভারতের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আমরা ছোটবেলা থেকেই এসব পড়ে আসছি, শুনে আসছি, কিন্তু বাস্তবে গ্রামে যাদের আয় এবং ব্যয় উভয়ই কম তারাই গ্রামে বাস করে। এখন যেখানে টেলিকম অপারেটরা নিজেদের মুনাফার দিকটি সবার আগে মাথায় রাখে সেখানে তারা গ্রামের মানুষের কথা ভাববেনা, এটাই স্বাভাবিক। লক্ষ্য করে দেখবেন যে, যেসব জায়গায় মানুষ মোবাইল পরিষেবাতে বেশি ব্যয় করছে সেসব জায়গায় নেটওয়ার্কের অবস্থা ভাল। কিন্তু আজও গ্রামে মোবাইলে কথা বলতে গেলে ছাঁদে উঠে কোনো এক কোণায় যেতে হয় বা জানালার বাইরে মাথা রেখে কথা বলতে হয়। সত্য তো এটাই যে সেখানে মোবাইল পরিষেবা পরিষেবা প্রদানকারীরা ARPU অর্থাৎ গড় আয়ে ব্যবহারকারী বাড়ানোর দিকে সচেষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে যেখান থেকে বেশি টাকা আসবে, সেখানেই কাজ হবে।

আরও পড়ুন: নতুন বছরের শুরুতে সামনে আসলো OnePlus 10 Pro এর স্পেসিফিকেশন, Snapdragon 8 Gen 1 প্রসেসর এর সাথে লঞ্চ হতে চলেছে এই স্মার্টফোন

পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির পরেও নেটওয়ার্ক কি ভালো হবে?

গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে, প্রায় সমস্ত মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী তাদের মোবাইল পরিষেবা চার্জ 20-25 শতাংশ বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, যেই পরিষেবাটির জন্য আগে আপনার 400 টাকা খরচ হত, এখন সেখানে আপনার খরচ বেড়ে হয়েছে প্রায় 500 টাকা। সেই সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসেও এখন আগের মতো পরিস্থিতি নেই যে আপনি ছোট কোনো প্ল্যান নিয়ে, ইনকামিংয়ের জন্য ফোন রাখবেন আর ছেলে যদি শহর থেকে ফোন করলে কথা বলবেন। বরং এখন প্রতি মাসে রিচার্জ করা বাধ্যতামূলক, তা না হলে পরিষেবা বন্ধ। এমতাবস্থায় প্রশ্ন এটাই যে ব্যবহারকারী গ্রামের হোক বা শহরের, কম টাকার রিচার্জ করুক বা বেশি, উভয় জায়গায়তেই যখন ফি দেওয়া হচ্ছে, তা হলে নেটওয়ার্ক কেন ভালো হচ্ছে না? কেন ভারতীয় ব্যবহারকারীদের ভাল মানের 4G পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না? গত দুই বছরে মোবাইল ট্যারিফ প্ল্যান দুবার বাড়ানো হয়েছে এবং উভয়বারই কোম্পানিগুলি প্রায় 20-25 শতাংশ চার্জ বৃদ্ধি করেছে, তবুও নেটওয়ার্কের অবস্থা একই রয়ে গেছে।

মোটামুটি চলা 5G নাকি ভালো নেটওয়ার্কের 4G! কোনটা প্রয়োজন?

এখন পর্যন্ত আপনারা দেখলেন যে কিভাবে মোবাইলের ব্যবসা চলছে। পরিষেবা ভাল হোক বা না হোক টাকা উসুল করাই যেন আসল লক্ষ্য৷ এই অবস্থায় 5G পরিষেবা আসলেও ব্যবহারকারীরা কী পাবেন? বিশেষ করে ছোট শহর ও গ্রামের ব্যবহারকারীরা। ব্যয়বহুল মোবাইল পরিষেবা এবং দুর্বল সংযোগ! এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি আশা করা সম্ভব নয়। তাহলে কেন ব্যয়বহুল এবং মোটামুটি 5G এর পরিবর্তে আরও ভাল মানের 4G নেটওয়ার্ক সম্পর্কে কথা বলা হবে না? ভারতী এয়ারটেলের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তলও সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যে তারা ব্যবহারকারীকে ARPU অর্থাৎ average revenue per user 600 টাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান। অর্থাৎ তার কথা থেকে এই আন্দাজ করা যায় যে পরিষেবাগুলি ভবিষ্যতে আরও ব্যয়বহুল হতে পারে । বর্তমানে ARPU প্রায় দেড়শ টাকার আশেপাশে আছে। এখন আপনি নিজেই চিন্তা করুন যে পরবর্তী সময়ে 5G এর নামে আরও কতটা ব্যয়বহুল হতে চলেছে পরিষেবা। এই অবস্থায় এটাই ভালো যে মাস দুয়েক আগেই ভালো সার্ভিসের নামে খরচ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আর আমরাও এখন এই বর্ধিত ফি মানিয়ে নিয়েছে। 4G সার্ভিস শুরু হচ্ছে 42mbps স্পিড থেকে তার চেয়ে কম হল 3G। বর্তমানে আমরা এই স্পিডেই খুশি। অতএব, পরিষেবা প্রদানকারীদের 5G পরিষেব চালু করার পরিবর্তে 4G নেটওয়ার্ক আরও উন্নত করা উচিত, ভারতের মানুষ এতে খুশি হবে।

আমাদের ফেসবুকে ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here