2017 সালের জুন মাসে যখন মুকেশ আম্বানি জিওর 4জি ফিচার ফোন Jio Phone সম্পর্কে ঘোষণা করেন তখন গোটা টেলিকম জগত যেন রীতিমতো নড়েচড়ে বসে। আজ প্রায় আড়াই বছর পর ধিরুভাই আম্বানির জন্মদিনে জিও সম্পর্কে এমনই একটি বড় খবর পাওয়া গেছে। আমরা খবর পেয়েছি কোম্পানি Jio Phone এর সস্তা ভেরিয়েন্ট Jio Phone Lite এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই ফোনটির ফিচার সম্পর্কে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কোম্পানি এই বিষয়ে জিও পার্টনারের সঙ্গে সার্ভে করেছে এবং সেখান থেকেই আমরা খবর পেয়েছি। তাই আমরা এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে এই ফোনটি সত্যিই লঞ্চ করা হবে, কিন্তু এটা বলা যেতেই পারে যে কোম্পানি কিছু একটা ভাবছে এবং প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
আরও পড়ুন : Exclusive : বন্ধ হচ্ছে না JioPhone এর প্রস্তুতি, আরও 15 লক্ষ অর্ডার দিল কোম্পানি
তবে মনে রাখার মতো কথা হল জিও কোম্পানি মূলত 4জি অর্থাৎ ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য স্বনামধন্য। তাই যখন খবর পাওয়া গেল কোম্পানি ফিচার ফোন নিয়ে আসছে, তাও আবার শুধুমাত্র ভয়েস কলের জন্য, সত্যিই অবাক হতে হয়েছে। তাই এই তথ্য যাচাই করার জন্য আমরা দুটি আলাদা আলাদা সোর্স থেকে খোঁজ নিই এবং দুই ক্ষেত্রেই প্রায় একই রকম উত্তর পাই।
কেমন হবে Jio Phone Lite?
কোম্পানির পক্ষ থেকে আয়োজিত জিও পার্টনারের সার্ভের পর আমরা জানতে পেরেছি জিওফোনের মতোই Jio Phone Lite ও একটি কীপ্যাডযুক্ত স্মার্টফোন হবে। ভারতীয় মার্কেটে এই ফোনটি 500 টাকারও কম দামের বাজেটে লঞ্চ করা হতে পারে। আমাদের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ফোনটির সম্ভাব্য দাম 399 টাকার কাছাকাছি হবে। সবচেয়ে বড় কথা এই ফোনে ইন্টারনেট চলবে না। কোম্পানি শুধুমাত্র ভয়েস কলের কথা মাথায় রেখে এই ফোনটি পেশ করতে পারে। রিলায়েন্স জিওর পক্ষ থেকে Jio Phone Lite এর জন্য 50 টাকার কম দামের মাসিক প্ল্যান পেশ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : BSNL নিয়ে এল বিশেষ নিউ ইয়ার অফার, জেনে নিনইউজাররা কি বেনিফিট পাবেন
এই ফোনটি কত দিনের মধ্যে ভারতে লঞ্চ করা হবে তা এখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে কোম্পানি প্রত্যেক বছর Reliance AGM মিটিংয়ে তাদের নতুন এবং বড় ধরনের কোনো প্ল্যান ও অফার সম্পর্কে ঘোষণা করে থাকে। তাই মনে করা হচ্ছে Reliance AGM 2020 এর মঞ্চে এই ফোনটির প্রথম অফিসিয়াল ঘোষণা করা হতে পারে।
Jio Phone Lite কি আদৌ দরকারি?
মুকেশ আম্বানি জিওফোন লঞ্চের সময় বলেছিলেন এই ফোনের সাহায্যে তিনি সেইসব মানুষদের ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করতে চান যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে সক্ষম বা অভ্যস্ত নন। আরও জানিয়েছিলেন কোম্পানি প্রতি মাসে 5 মিলিয়ন Jio Phone প্রস্তুত করতে চায়। জিওফোন লঞ্চের পর এই ফোনটি সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং কোম্পানি সফলতার এক নতুন রেকর্ড গড়ে। এই বছর অর্থাৎ 2019 সালের অক্টোবরে পেশ হওয়া একটি রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত কোম্পানি প্রায় 70 মিলিয়ন অর্থাৎ 7 কোটিরও বেশি জিওফোন বিক্রি করেছে এবং এখনও করে চলেছে।
রিলায়েন্স জিওর পরিষেবা অফিসিয়ালি 2016 সালের 5 সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করেছিল এবং মাত্র তিন বছরের মধ্যে কোম্পানি 35 কোটিরও বেশি ইউজারের সঙ্গে ভারতের এক নাম্বার টেলিকম অপারেটর কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। কোম্পানিকে এই জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য জিওফোনের অবদান অনেকখানি।
কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়েও ভারতে এমন বহু মানুষ আছেন যারা ইন্টারনেটের সঙ্গে সেইভাবে যুক্ত নন এবং শুধুমাত্র ভয়েস কলিঙেই তারা খুশি। সেই সমস্ত মানুষদের জন্য Jio Phone Lite ভবিষ্যতে কোম্পানির একটি অনেক বড় পদক্ষেপে পরিণত হতে পারে। অত্যন্ত কম দামে ফোন এবং জলের দরে রিচার্জ প্ল্যান পেশ করে কোম্পানি সাধারণ মানুষের জন্য একটি নতুন অপশন নিয়ে আসতে পারে এবং হতে পারে কোম্পানির এই সিদ্ধান্তের ফলে টেলিকম সেক্টরের বর্তমান প্রতিযোগিতায় রিলায়েন্স জিও অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় বহুগুণ এগিয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন : WhatsApp থেকে ম্যাসেজ ডিলিট না করে কিভাবে পার্সোনাল চ্যাট লুকাবেন?
কারা ব্যবহার করবে Jio Phone Lite?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে স্মার্টফোন মার্কেট খুব দ্রুত গতিতে তার পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু তাও ভারতে এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ এমন আছেন যারা ফিচার ফোন ব্যবহার করেন এবং মূলত ভয়েস কলিঙের ওপর নির্ভর করে থাকেন। কিছু দিন আগে কাউন্টারপয়েন্টের পেশ করা একটি রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ভারতে বর্তমানে 400 মিলিয়নেরও বেশি ফিচার ফোন ইউজার আছেন এবং Jio Phone Lite লঞ্চ হলে এইসব গ্ৰাহকরাই কোম্পানির মূল লক্ষ্য হবেন।
এই ব্যাপারে টেকআর্কের ফাউন্ডার ও চীফ অ্যানালিস্ট ফৈশল কাউসা তাঁর লাইভমিন্টে দেওয়া একটি ইন্টারভিউয়ে বলেছিলেন, “এখনও অনেক ইউজার এমন আছেন যারা স্মার্টফোনের সঙ্গে ঠিক অভ্যস্ত নন। তারা নিজেদের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের এক্সপোজার থেকে দূরে রাখতে চান এবং কলিং পর্যন্ত সীমিত থেকেই তারা খুশি। এই ধরনের মানুষরা এখনও ফিচার ফোন কেনেন। অ্যাফোর্ডাবিলিটি এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলা ফিচার ফোনের অন্যতম বিশেষত্ব এবং এই কারণেও বহু ইউজার ফিচার ফোনেই নিজেদের টিকিয়ে রাখতে চান।”
তাই বলা যেতেই পারে জিওর জন্য এখনও একটি বড় মার্কেট অপেক্ষা করছে। Jio Phone Lite বাজারে এলে অ্যাফোর্ডাবিলিটি, লং লাইফ ও ভয়েস কলিঙের জন্য ফোন ব্যবহার করা মানুষদের প্রথম চয়েস এই ফোনটিই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Jio Phone এর স্পেসিফিকেশন
কোম্পানি তাদের প্রথম 4জি ফিচার ফোন হিসেবে 2017 সালে Jio Phone লঞ্চ করেছিল। এটি একটি স্মার্ট ফিচারযুক্ত 4জি ফিচার ফোন। এতে ইন্টারনেট ছাড়াও ভিডিও কল, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউবের মতো ফিচার আছে। এই ফোনে 2.4 ইঞ্চির টিএফটি কালার স্ক্রিন দেওয়া হয়েছে। এই ফোনটিতে 1 গিগাহার্টসের ডুয়েল কোর প্রসেসর ও 512 এমবি র্যাম আছে। এতে 4 জিবি ইন্টারনাল মেমরি আছে যা মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহার করে বাড়ানো যায়।
ফোটোগ্ৰাফির জন্য Jio Phone এ 2 মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরা আছে। সেলফি ও ভিডিও কলের জন্য এই ফোনের ফ্রন্ট প্যানেলে ভিজিএ ক্যামেরা সেন্সর দেওয়া হয়েছে। এতে বিনোদনের জন্য এফএম রেডিও এবং মিউজিক প্লেয়ারও আছে। এতে লাউডস্পীকার দেওয়া হয়েছে। পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য Jio Phone এ 2,000 এমএএইচের ব্যাটারী আছে।
আমাদের ফেসবুকে ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন