শরীর খারাপ হলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষ ডাক্তার দেখাতে যায়। এইরকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ডাক্তারই একমাত্র ব্যাক্তি যার ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। একই ঘটনা যদি টেক ও গ্যাজেটের ক্ষেত্রে ঘটে তবে সার্ভিস সেন্টার এক এবং অদ্বিতীয় অপশন। ডাক্তারের মতোই আমরা সার্ভিস সেন্টারের কর্মচারীদের ওফর পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি এবং আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান একটি জিনিসে পরিণত হওয়া স্মার্টফোনকে সার্ভিস সেন্টারে জমা রেখে আসি। সেই ব্যাক্তি যতই আপনার ফোন সম্পূর্ণভাবে ঠিক করে দিক, কিন্তু আপনার অন্যতম একটি ব্যাক্তিগত জিনিস অর্থাৎ আপনার ফোন এভাবে সার্ভিস সেন্টারে রেখে আসার আগে অনেকগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। কারণ বেপরোয়াভাবে নেওয়া একটি ছোট পদক্ষেপও পরবর্তী সময়ে আপনার জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন : সস্তা হয়ে গেল Nokia 6.2 স্মার্টফোন, জেনে নিন নতুন দাম
আপনাদের গত 4 নভেম্বর ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার উদাহরণ দিই। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী এক যুবতীকে এমনই ছোট একটি ভুলের জন্য বড় মাশুল দিতে হয়েছে, সার্ভিস সেন্টারে ফোন দেওয়ার ফলে তাঁর “একান্ত ব্যক্তিগত ফোটো” শেয়ার হয়ে গেছে। এটি অন্য কোনো কোম্পানি নয়, বরং গোটা বিশ্বের অন্যতম বড় টেক কোম্পানি Apple এর সার্ভিস সেন্টারের ঘটনা। গ্লোরিয়া নামের একটি মেয়ের iPhone কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় সে তাঁর ফোন Apple সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরত এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে তাঁর ফোনটি ঠিক করার সময় সে গ্লোরিয়ার ফোন থেকে তাঁর একটি “অত্যন্ত গোপন” ফোটো নিজের নাম্বারে ফরোয়ার্ড করে নেয়। আমেরিকায় এই ঘটনা বর্তমানে যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই কারণেই আমরা চাই আমাদের পাঠকরাও সচেতন হোক এবং তাদের যেন এই ধরনের কোনো ঘটনার সম্মুখীন না হতে হয়।
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে :
1. ব্যাঙ্কিং ডিটেইলস ডিলিট করুন :
যখন থেকে মানুষের হাতে স্মার্টফোন আসতে শুরু করেছে, বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং করতে শুরু করেছে। ব্যাঙ্কের অ্যাপ হোক বা অনলাইন ব্যাঙ্কিং, ফোন থেকেই টাকা দেওয়া নেওয়া হয়ে যায়। ব্যাঙ্কের ডকুমেন্ট যেমন ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ডিটেইলস, ই-ব্যাঙ্কিং আইডি এবং এটিএম ও ইন্টারনেট ট্রানজংকশনের পাসওয়ার্ড প্রভৃতি তথ্য মানুষ তাদের ফোনেই সেভ করে রাখেন। এমন অবস্থায় ফোন সার্ভিস সেন্টারে জমা দেওয়ার আগে অবশ্যই এই ধরনের ডিটেইলস ফোন থেকে ডিলিট করে দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন : স্যামসাংকে টক্কর দিতে চলে এল ফোল্ডেবল Moto Razr, খুব তাড়াতাড়ি লঞ্চ হবে ভারতেও
2. ওয়ালেট অ্যাপ আনইনস্টল করুন :
ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে পেটিএম, গুগল পে, ফোন পে ও ভীম অ্যাপগুলিও আজ সাধারণ মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। টুকটাক জিনিসপত্র কেনা থেকে শুরু করে মোবাইল রিচার্জ, সবই প্রায় এইসব অ্যাপের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই সার্ভিস সেন্টারে ফোন দিতে যাওয়ার আগে এইসব অ্যাপও আনইনস্টল করে দেওয়া দরকার। ফোন ঠিক হয়ে গেলে এইসব অ্যাপ আবার ইনস্টল করা যাবে।
3. কন্ট্যাক্ট ও ম্যাসেজও লোকানো দরকার :
একটা সময় ছিল যখন মানুষ ডায়েরিতে তাদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের ফোন নাম্বার লিখে রাখত। অনেকে তো আবার তাদের নিকট ব্যাক্তিদের নাম্বার মুখস্থ করে রাখতেন। কিন্তু যখন থেকে স্মার্টফোন এসেছে মানুষ ফোন নাম্বার মুখস্থ করার বা ডায়েরিতে লেখার বদলে ফোনের কন্ট্যাক্ট লিস্টেই সেভ করে রাখেন। সার্ভিস সেন্টারে ফোন জমা দেওয়ার আগে নিজের কন্ট্যাক্ট লিস্ট সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন। কারণ কন্ট্যাক্ট লিস্টের নাম্বার শেয়ার হয়ে গেলে সেটা শুধুমাত্র আপনার জন্য নয় বরং সেইসব ব্যাক্তিদের জন্যও সমস্যার কারণ হবে যাদের নাম্বার ফোনে সেভ আছে।
4. ফোটো গ্যালারি :
বলা হয় যে ফোনের গ্যালারি ইউজারের নেচার ও পার্সোনালিটি প্রতিফলন করে। প্রত্যেকেই তাদের ফোনের গ্যালারিতে তাদের বিশেষ মুহুর্তের ছবি সাজিয়ে রাখেন। এর মধ্যে যেমন আমাদের নিজেদের ছবি থাকে, তেমনই থাকে আমাদের বন্ধু, আত্মীয় ও প্রিয়জনদের ফোটো। তাই ফোন সার্ভিস সেন্টারে জমা রাখার আগে ফোনের গ্যালারি থেকে সমস্ত ফোটো ল্যাপটপ বা কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসে করে নিয়ে ফোন থেকে ডিলিট করে দেওয়াই ভালো। ফোন ঠিক হয়ে গেলে সব ফোটো আবার গ্যালারিতে কপি করে নেওয়া যায়।
5. ইমেইল ও পাসওয়ার্ড :
বেশিরভাগ দরকারি ডকুমেন্ট এবং মেইল ইমেইল আইডিতে সেভ থাকে। একইভাবে অনেক ইউজার অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ডও গুগল অ্যাকাউন্ট বা অ্যাপেল আইডিতে সেভ করে রাখেন। তাই সার্ভিস সেন্টারে ফোন দেওয়ার আগে ফোন থেকে এসব ডিলিট করে দেওয়া উচিত।
সবচেয়ে বড় কথা সার্ভিস সেন্টারে ফোন জমা করার আগে ফোনের ব্যাকআপ নিয়ে রাখা দরকার। সম্ভব হলে আপনার ফোন ফরম্যাট করে দিন।। এরকম করা হলে শুধুমাত্র যে আপনার ফোনের ডেটা সুরক্ষিত থাকবে তাই নয়, বরং রিপেয়ারের পর আপনার ফোন একদম নতুন একটি ডিভাইসের মতো কাজ করবে। ফোনের স্ক্রিন যদি অন না হয় তবে সেক্ষেত্রে ফোনটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সঙ্গে কানেক্ট করে ফোন রিসেট করা যায়।
আমাদের ফেসবুকে ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন