আপনার কি আপনার প্রথম ফোনের কথা মনে আছে? যেখানে 1.8 ইঞ্চির মনোক্রোম স্ক্রিন থাকতো এবং আপনি এটি দিয়ে শুধুমাত্র কলিং ও ম্যাসেজিং করতে পারতেন। কিন্তু আজ প্রত্যেকের হাতে বড়ো বড়ো স্মার্টফোন দেখা যায়, যেখানে 6 ইঞ্চি থেকে শুরু করে আরও বড়ো বড়ো মাপের স্ক্রিন আছে। আজ স্ক্রিনের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক ধরনের নতুন টেকনোলজিওবেরিয়ে গেছে। আজকাল ডিসপ্লের কথা বলতে গেলেই আসপেক্ট রেশিওর কথা উঠে আসে। কিছু স্মার্টফোনে 16:9 আসপেক্ট রেশিও দেখা যায় আবার কিছু ফোন 18:9 রেশিওযুক্ত। আজকাল বেশিরভাগ স্মার্টফোনে 19:9 আসপেক্ট রেশিওর সঙ্গে লঞ্চ করা হয়। বর্তমানে তো 21:9 আসপেক্ট রেশিওর কথাও উঠে এসেছে। আপনার মনে হয়তো একবারের জন্য হলেও এই প্রশ্ন উঠে এসেছে যে এই আসপেক্ট রেশিও কি এবং এর ফলে কি পার্থক্য দেখা যায়? চলুন তবে আজ জেনে নেওয়া যাক ফোনের স্ক্রিনের এই বিশেষ টেকনোলজি “Aspect Ratio” সম্পর্কে।
Xiaomi ও তৈরি করছে 64 মেগাপিক্সেল ক্যামেরাওয়ালা স্মার্টফোন, প্রতিযোগিতার মুখে স্যামসাং
আসপেক্ট রেশিও কি?
আপনি হয়তো এখন এটাই ভাবছেন যে কি এই আসপেক্ট রেশিও? জানিয়ে দিই আসপেক্ট রেশিওর সাহায্যে কোনো ফোনের স্ক্রিনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত বোঝানো হয়। এটি মূলত W:H রূপে লেখা হয়। এখানে H মানে হাইট অর্থাৎ উচ্চতা এবং W মানে উডথ্ অর্থাৎ চওড়া বা প্রস্থ বোঝানো হয়। ধরা যাক একটি ফোনের আসপেক্ট রেশিও 16:9। ফোনটি লম্বায় 16টি সমান ভাগে বিভক্ত এবং চওড়ায় 9টি। ফোনের স্ক্রিন এই ধরনের সমান ভাগে ভাগ করার জন্য যে সমান লাইন বা দাগ টানা হয় তাকে লেটার বক্স বলে।
একই ভাবে কোনো স্ক্রিনের আসপেক্ট রেশিও 18:9 হলে ধরে নিতে হবে স্ক্রিনের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 18 অনুপাত 9।
Exclusive : দেখুন Motorola One Action এর প্রথম ফোটো
কিভাবে বদলেছে স্ক্রিনের আসপেক্ট রেশিও?
শুধুমাত্র মোবাইল স্ক্রিন নয়, টিভিসহ অন্যান্য ডিসপ্লেওয়ালা সব ধরনের ডিভাইসেই আসপেক্ট রেশিও থাকে। ফোনের প্রচলন সেইভাবে শুরু হওয়ার আগেই সমস্ত বাড়িতে টিভি-কম্পিউটার এসে গেছিল এবং আসপেক্ট রেশিওর সূচনা সেখান থেকেই। প্রথমদিকে টিভি ও মনিটরের আসপেক্ট রেশিও হতো 4:3। 2003 সাল পর্যন্ত ভারতসহ বিশ্বের সমস্ত দেশে বেশিরভাগ টিভি ও কম্পিউটারের জন্য 4:3 আসপেক্ট রেশিওকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে চলা হতো। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে 5:4 আসপেক্ট রেশিওও ব্যবহার হতে দেখা গেছে। কিন্তু 2003 সালের পর থেকে ট্রেন্ড খুব দ্রুতগতিতে বদলাতে থাকে। 2006 সালে কম্পিউটার মনিটরের ক্ষেত্রে 16:10 আসপেক্ট রেশিওর বাহুল্যতা দেখা যায়। এই 16:10 আসপেক্ট রেশিও সর্বপ্রথম ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয় এবং খুব দ্রুত তা অন্যান্য ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় থেকে 16:9 ও 16:10 আসপেক্ট রেশিওর প্রচলন হয়।
নতুন আসপেক্ট রেশিওর জনপ্রিয়তা বাড়ার মূল কারণ ছিলো লম্বাটে স্ক্রিনওয়ালা ডিসপ্লে। অর্থাৎ প্রথমদিকের ডিসপ্লে প্রায় বর্গাকার ছিলো এবং এই ডিসপ্লে ব্যবহারের অনুভব একদম অন্য ধরনের ছিলো। কিন্তু নতুন আসপেক্ট রেশিওতে গেম খেলা থেকে শুরু করে যে অ্যাপ চালানো সব কিছুই যেন খুব সহজ হয়ে ওঠে। 2008 সালে 16:10 ও 16:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিন মনিটরের জন্য স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হয়। 2011-2012 সালে 4:3 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত মনিটরের নির্মাণ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিলো।
Motorola One, Moto G7 ও Moto G7 Power ফোনের দাম কমলো, কোম্পানি করছে নতুন প্ল্যান
টিভির ক্ষেত্রে 2010 সালের আগে পর্যন্ত বেশিরভাগ কোম্পানি 4:3 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিন ব্যবহার করতো কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে 16:9 আসপেক্ট রেশিও টিভির জন্য স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়ায়। নতুন এইচডি ও এফএইচডি টিভির জন্য এই আসপেক্ট রেশিওই ব্যবহার করা হতো। এই সময় টিভিতে 18:9 আসপেক্ট রেশিও খুব কম দেখা যেত। অথচ কি অদ্ভুত না? 21:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত টিভিরও ছড়াছড়ি।
যদিও আসপেক্ট রেশিওর কথা সবচেয়ে বেশি মোবাইলের ক্ষেত্রেই শোনা যায়। তাই চলুন মোবাইলের কথাই জানা যাক। 2010 সাল পর্যন্ত মোবাইলের ক্ষেত্রে 3:2 ও 5:3 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনই বেশি দেখা যেত। কিন্তু স্মার্টফোন আসার পর সবকিছু একেবারে বদলে যায়। 2010 সালের পর 16:9 আসপেক্ট রেশিওর প্রচলন হয় এবং তা যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে।
2016 সাল পর্যন্ত 16:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্মার্টফোনেরই প্রাচুর্যতা দেখা যায়। কিন্তু 2017 সাল থেকে 18:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনের সূচনা হয় এবং কোম্পানিগুলি একে ইনফিনিটি ডিসপ্লে নাম দেয়। এই ডিসপ্লের হাত ধরে বেজল আরও সরু হয়ে যায় এবং খুব ছোট আকারেই চওড়া স্ক্রিন পাওয়া যায়।
এরপর নচ স্ক্রিনযুক্ত ফোনে 19:9 আসপেক্ট রেশিও, ওয়াটারড্রপ নচ, পাঞ্চ হোল ডিসপ্লে এবং পপ-আপ ক্যামেরাওয়ালা ফোনের ক্ষেত্রে 19.5:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিন দেখা যায়। আবার এই বছরের শুরুতে সোনী এবং পরবর্তীতে মোটোরোলা 21:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনের সঙ্গে স্মার্টফোন লঞ্চ করেছে। মোবাইলের ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে নতুন আসপেক্ট রেশিও।
40 কোটিরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে PUBG মোবাইল, আয়ের দিক থেকে নতুন রেকর্ড
আসপেক্ট রেশিওর মাধ্যমে কি পার্থক্য হয়?
এতক্ষণ আপনি জানলেন আসপেক্ট রেশিও কি এবং কিভাবে মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটার মনিটরের ক্ষেত্রে আসপেক্ট রেশিওর পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু আপনি হয়তো এখনও ভেবে চলেছেন আসপেক্ট রেশিওর ফলে কি পার্থক্য দেখা যায়। তবে দেরি কেন? চলুন জেনে নিই।
মোবাইল গেম বা অ্যাপ চালানোর সময় আসপেক্ট রেশিওর পার্থক্য খুব বেশি বোঝা যায় না। কারণ এগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এগুলি যে কোনো স্ক্রিন আসপেক্ট রেশিও ও রেজলিউশনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। কিন্তু কোনো সিনেমা বা মুভি দেখার সময় আপনি সঠিকভাবে আসপেক্ট রেশিওর পার্থক্য অনুভব করতে পারবেন।
BSNL এর নতুন প্ল্যানে পাওয়া যাবে প্রতিদিন 1 জিবি ডেটা ও আনলিমিটেড ভয়েস কল, দাম মাত্র 151 টাকা
আজকাল সিনেমা সাধারণত 21:9 আসপেক্ট রেশিওর হিসেবে রেকর্ড করা হয়। তাই যখন অন্য কোনো আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনে আপনি সেই সিনেমা দেখবেন তখন সাইডে কালো দাগ দেখতে পারবেন। একে পিলার বক্সেস (Pillar Boxes) বলা হয়। 4:3 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনে সিনেমা দেখার সময় লক্ষ্য করে থাকবেন এক্ষেত্রে কালো দাগ খুবই চওড়া থাকে। একই ভাবে 16:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনেও দাগ দেখা যাবে। যদিও কিছু ফোনে স্ট্রেচ করে দাগ সরিয়ে স্ক্রিন ভরিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু এক্ষেত্রে ছবির বাস্তবতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু 21:9 আসপেক্ট রেশিওযুক্ত স্ক্রিনে কোনো কালো দাগ ছাড়াই গোটা স্ক্রিন জুড়ে আসল শেপে সিনেমা দেখা যাবে।
আমাদের ফেসবুকে ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন